• রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের কাছে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ঝুঁকি তুলে ধরবেন ক্রিস্টেনসেন

২৪ ঘন্টা / ৩০
শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ সেপ্টেম্বর ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের অনুমোদন পেলে তিনি ঢাকায় দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির শুনানিতে ক্রিস্টেনসেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ঝুঁকি সম্পর্কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেবেন।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির শুনানিতে বাংলাদেশসহ চারটি দেশের জন্য মনোনীত রাষ্ট্রদূতরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। শুনানিতে সিনেটরদের প্রশ্নের জবাবে ক্রিস্টেনসেন বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, বিশেষ করে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এই শুনানি মার্কিন সিনেটের ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

শুনানিতে নেব্রাস্কা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর পিট রিকেটস বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, চীন সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সাবমেরিন ঘাঁটি সংস্কার করেছে, যেখানে যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন রাখার সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ যুদ্ধবিমান, সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল এবং দীর্ঘপাল্লার রাডার কেনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। রিকেটস বলেন, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ চীনের প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তুলছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের বিষয়। রিকেটস ক্রিস্টেনসেনকে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি কীভাবে চীনা অস্ত্রের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা কমাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে কাজ করবেন। জবাবে ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করব। চীনের কার্যক্রম, তাদের সামরিক সম্পৃক্ততা, সমুদ্র এলাকায় তৎপরতা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় তাদের ভূমিকার ঝুঁকি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানাব। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সুবিধাগুলো তুলে ধরব, বিশেষ করে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে।’

শুনানির সময় সিনেটর রিকেটস উল্লেখ করেন, মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি সম্প্রতি ‘থিংক টোয়াইস অ্যাক্ট’ নামে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই প্রস্তাবের লক্ষ্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশকে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনায় নিরুৎসাহিত করার জন্য একটি কৌশল প্রণয়ন করা। তিনি বলেন, এই বিল বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাজে সহায়ক হবে এবং চীনের অস্ত্র বিক্রির প্রভাব মোকাবিলায় আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

পেশাদার কূটনীতিক ক্রিস্টেনসেন ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগের অভিজ্ঞতার কারণে তিনি দেশটির গুরুত্ব ও স্বার্থ সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই নির্বাচন বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই পথে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে ক্রিস্টেনসেন ঢাকায় পিটার হাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মার্কিন দূতাবাসের দায়িত্বে ছিলেন।


এই ক্যাটেগরির আরও খবর