অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মুহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। পুরোনো ছবি
আজ সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা উচিত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা তো সাব জুডিস। কারণ আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদালত আদেশে দিয়েছেন সেই আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে গিয়েছে। এই মুহূর্তে এ ধরনের আদালতের প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটা আমি মনে করি উচিত না। তাদের বলব যে বিষয়টা বিচারাধীন, সেটা রাজপথে না আনা। কারণ আদালত তো আছেই, বিচার হচ্ছে, হবে। সেই ক্ষেত্রে তাদের আমি একটু ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করব।’
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি জানি না তারা কেন আন্দোলন করছেন? আমি মনে করি আন্দোলন না করাই ভালো। সরকারি চাকরিতে (সাবেক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আন্দোলন না করাই উচিত। আগামী বৃহস্পতিবার বিষয়টি ফের শুনানির জন্য আসবে। আমরা বুধবারও যদি পূর্ণাঙ্গ রায় পাই তাহলে সিপি (নিয়মিত আপিল) করব।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, ‘সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে, এ বিষয়ে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
পরে গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।